Thursday, June 24, 2010

আমাদের বুয়েট নিয়ে কি কেউ ভাবে না?

আমি তখন ১/২ তে পড়ি, বুয়েটে নতুনই বলা চলে।বুয়েটের যা দেখি তাতেই অবাক হই আর ভাবি এটা বুয়েট বলেই সম্ভব।একদিন দেখি আমি লাইব্রেরীতে ডিফল্টার,বই দেরি করে জমা দেওয়ায় ১ টাকা ৭০ পয়সা জরিমানা করা হয়েছে।টাকার অংক কম হলেও এই টাকা ২ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।যে কারও জন্য ব্যপারটা আতংকজনক।বুঝলাম এটা বুয়েট বলেই সম্ভব।কারও ছাড় নাই এখানে, ১ টাকা ৭০ পয়সা ও জরিমানা আদায় করা হয়।বুয়েটের এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপর আস্থা আর শ্রদ্ধা বেড়ে গেল বহুগুন।আমার মনে হল বাংলাদেশের আর কোথাও এত ভাল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন নেই।যাই হোক এরপর আরও চার বছর বুয়েটে ছিলাম, এবং বুয়েটের শেষের দিকে এসে মনে হল বাংলাদেশের আর কোথাও এত বাজে এ্যাডমিনিস্ট্রেশন নেই।

নিশ্চয় আমার সাথে অনেকে একমত হবেন না।বাংলাদেশের অনান্য ইনিভার্সিটির উদাহরণ টেনে আনলে মনে হতে পারে বুয়েট সে তুলনায় অনেক ভাল।কিন্তু ব্যপারটা আরও একটু তলিয়ে দেখা দরকার।সবচেয়ে কাছে ঢাকা ইনিভার্সিটি,তাদের প্রায় ৪০ হাজার ছাত্র।প্রয়োজনের অর্ধেকও হলের সিট সংখ্যা হবে কিনা সন্দেহ।বছরের পর বছর রাজনীতিবিদেরা তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন ঢবির ছাত্রদের।ক্লাস রুমের সংকট,টিচারের সংকট,রাজনৈতিক নানা রকম চাপ সহ আরও প্রায় হরেক রকম দশটা সমস্যা লেগেই আছে।সেই ঢাকা ইউনিভার্সিটির আমাদের ব্যাচের ইমোনমিক্সের ছাত্ররা মাস্টার্সের ক্লাস যে দিন শুরু করে সেদিন আমরা ৪/২ ক্লাস শেষ করি।

বুয়েটের পড়াশোনার মান নিয়ে যতটা না অভিযোগ এর চেয়ে অনেক বেশি বুয়েটের সেশন জট নিয়ে।বুয়েটে গত বিশ বছরে এরচেয়ে বড় সমস্যা মনে হয় না আর দেখা দিয়েছে।প্রতিবার পরীক্ষার আগে পরীক্ষা পেছানোর দাবি ওঠে ছাত্রদের পক্ষ থেকে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ এই একটা ক্রাইসিস এর সমাধান বের করতে পারল না বিশ বছরে।স্যাররা ছাত্রদের ওপর সব দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব খুব ভাল ভাবে পালন হয়েছে বলে মনে করেন।ছাত্ররা আমরাতো বুয়েট স্টুডেন্ট,আমাদের আর চিন্তা কী ভেবে পরের পরীক্ষায় আবার মিছিলে যায়।যখন ছাত্র ছিলাম ভাবতাম দোষটাতো ছাত্রদেরই।কিন্তু পরে এসব ব্যপারে স্যারদের আগ্রহ দেখে মনে হল তারাও তুলসী পাতা নন।কখনোতো ইদানিংতো মনে হয় ছাত্রদের চেয়ে পরীক্ষা পেছানোতে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ বেশি,ছাত্ররা শুধু চাইলেই হল।আগে শুধু পরীক্ষা পেছাত, গত সেমিস্টার থেকে শুরু হয়েছে ক্লাস পেছানো।অবস্থা এমন যে দশজন মিলে একটা মিছিল করলেই হল,কর্তৃপক্ষ রেডি হয়ে বসে থাকে ভার্সিটি বন্ধ করতে।কয়েকদিন আগে ছাত্ররা জাস্ট এক রাতে মিছিল করেছিল খেলা দেখার জন্য ক্লাস বন্ধ করতে আর তাতেই কর্তৃপক্ষ পরের দিন মিডটার্মের ছুটি এক সপ্তা বাড়িয়ে ২/৩ সপ্তাহ এগিয়ে দিল।এত দ্রুত ১২ ঘন্টার মাঝে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং কি করে করা সম্ভব হল আর তাতে সবাই কি করে বিষয়টাতে একমত হল ভাবতে অবাক লাগে।কোন রকম গঠনমুলক কাজের জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের তৎপরতার সাথে ছুটি দেবার ব্যপারে তাদের তৎপরতা তুলনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে তাদের সদিচ্ছা কতটুকু সহজেই বুঝা যায়।

একজন মানুষ যত বেশি মেধাবী হবে কোন ইস্যুতে তার বিশ্লেষণ তত পরিষ্কার হবে বলে আমার ধারণা।বুয়েটের কিছু ছাত্র(যা ১০% এর বেশি হবে না) চলমান ছাত্র রাজনীতির সাথে নিজেদের এমন ভাবে মানিয়ে নেয় যা বিশ্বাস করা কঠিন।আরও হাস্যকর হল বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি অনেকটা দুখ-ভাত পর্যায়ের।কলেজের কিছু ফ্রেন্ড ঢাবিতে রাজনীতি করার কল্যাণে যা বুঝতে পেরেছি বুয়েটের স্টুডেন্ট পলিটিক্সকে তারা একটা মেয়েলী প্রচেষ্টা হিসেবেই বিবেচনা করে। সব মিলিয়ে অল্প কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া যারা বুয়েটে ভর্তি হচ্ছে তারা সারাজীবন পড়াশুনা করা,ভাল রেজাল্ট করা ছেলেমেয়ে।একটা কর্তৃপক্ষ যদি এসব ছাত্র নিয়ে একটা ইনিভার্সিটির সামান্য একটা ইস্যু সলভ না করতে পারে তবে এমন অথর্ব কর্তৃপক্ষের বিদায় নেয়া উচিত ।

Monday, March 22, 2010

পূর্ণ অভ্যন্তরীন প্রতিফলন-১

কানে হেড ফোন গুজে রাখি সারাটা সময়,তা গান বাজুক আর নাই বাজুক। একদিন দেখি হেড ফোনের ভলিওম কমালেও সাউন্ড কমছে না। ব্যাপক গবেষণার পর বুঝলাম আমার অবর্তমানে কেউ স্পীকারে কানেকশন দিয়েছিল, আমি ঘন্টা খানেক ধরে হেড ফোন ভেবে স্পীকারে গান শুনছি।
গান খুব দ্রুত পুরনো হয়ে যায়।কোন গান ভাল লাগলে তিন চার দিন শুনি,এরপর আর ভাল লাগার কথা না।
সকাল সকাল ঘুমাতে যাই আজকাল,এই সকাল ৫ টা বা ৬টা।সকালের সৌন্দর্য বা নাস্তা কোনটাই সকালে ওঠার পক্ষে কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়।সকালে হলের বারান্দা থেকে ৭ নাম্বার বাস দেখা বা কেন্টিনের তেলতেলে পরটা - কোনটাই খেতেই ভাল লাগে না।
কারও (বা ক্ষেত্র বিশেষে কারও কারও) কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম থেকে ওঠি।না ওঠলেও হয়,হলে ডাকা ডাকি করার কেউ নেই।তবু ডাইনিংয়ের দুপুরের খাবার এবং দিনের শুরু - কোনটাই মিস হয় না।

-কাল সারা রাত নেট ছিল না,এই মড(মডারেটর) ব্যাপার কি?
-শালা!স্যার যে কি কোশ্চেন দিল আজকে,সেকশন বি কিছ্ছু কমন পরে নাই।
-অই কাল রাতে বেন্জামিন বাটন ডাউন লোড হইছে,কঠিন মুভি।
শত কন্ঠের সোরগোল, প্লেট চামচ এর টুংটাং, চেয়ার টানার শব্দ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি.....

হাত মুছতে মুছতে চেচিয়ে ওঠে কেউ, হায় ভাই, চা সিগ্রেট।
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ধোঁয়াটে বাতাস, আর সেই বাতাসে ভাসে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কাপে চুমুক দেয়ার শব্দ।ক্ষুদ্রতম কাপে কুৎসিততম চা।তাতে দুনিয়ার সমস্ত আয়েস নিয়ে আরএফএলের চেয়ারে হেলান দিয়ে চুমুক ----

মম এক হাতে ধুম্র বাণ
আর হাতে চা'কা পেয়ালা।

পড়তে হবে পড়তে হবে পড়তে হবে........... ফের বিছানায় বসা,কানে হেড ফোন গুজা ইত্যাদি,ইত্যাদি,ইত্যাদি
পড়ি,কি বা কেন পড়ি কে জানে?যে ভদ্রলোক পড়িয়েছেন তিনি নিজেও ক্ষেত্র বিশেষে জানেন না মনে হয়।

নিজের অজান্তেই বিছানায় এলিয়ে পড়ি, আধো ঘুমে কানে আসে রুমমেটের ফিস ফিস।

ফিস ফিস ফিস ফিস ফিস ফিস ফিস ফিস ..............
কথা কথা কথা কথা কথা কথা কথা কথা ...............

রাত যত গভীর হয় কথা তত বাড়ে।ঘরে বাইরে কথা,রুমে বারান্দায় কথা।লেপের নিচে,ছাদে উপর কথা।আকাশে বাতাসে কথা,ভালবাসার কথা।ইলেক্ট্রো মেগনেটিক ওয়েভে শুধু ভালবাসা,আহারে বেচারা ওয়েভের কখনো কি একটু ভালবাসতে ইচ্ছে হয় না?

কোনদিন ভুল করে কবি চলে আসেন।অথবা পরীক্ষা থাকলে এক অসম খেলার প্রস্তুতি নিতে।গিটারের ধুলা ওড়ে---
.............................................
.............................................
.............................................
I had to find the passage back
To the place I was before
.............................................
.............................................

টরেন্ট,মুভি,আইএমডিবি ইত্যাদি,ইত্যাদি,ইত্যাদি এবং এত কিছুর মাঝে আর রাস্তা খুঁজে পাই না।

আর তাই আমি পরিপূর্ন জৈবিক একজন মানুষ সব অপূর্ণ জৈবিক বা অজৈবিক চাহিদা নিয়ে কানে হেডফোন লাগাই।গান বাজে না,আর বাজলেও শুনি না(আড়াইশ টাকার হেডফোনের লংজিভিটি কমবেশ ৩/৪ মাস)।

কেউ কেউ ফোন করে বলে,এই সপ্তায় বাসায় আসবি?
আমার মোবাইলের টাকা শেষ,উত্তর দেয়া হয় না।

হায় রে বাসা,ভাল বাসা বা খারাপ বাসা তবুতো বাসা।কত সহজ বাড়ি যাওয়া,তবু যাওয়া হয় না।

তারপর আবার হেড ফোন,ইলেক্ট্রো মেগনেটিক ওয়েভ,গিটার,মুভি,পরীক্ষা এবং ইত্যাদি,ইত্যাদি,ইত্যাদি.....

---২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৫৫